কর্মক্ষেত্রে নেগেটিভ রিভিউ পেলে করণীয় কিছু পরামর্শ

মানব মস্তিষ্ক বড়ই বিচিত্র। কখনো আমাদের
একটা পজিটিভ ফিড ব্যাক পেয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। আবার কখনো সামান্য নেগেটিভ ফিডব্যাক পেয়ে ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক সর্বদা বাঁধাহীন পথ চায়। এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনো বাঁধা পছন্দ করে না। একটা মসৃণ পথ চায়। যখন আমাদের মস্তিষ্ক বাঁধার সম্মুখীন হয়, তখন হতাশ হয়ে পড়ে।
Source: blog.freereviewmonitoring.com
ধরুন, আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের লক্ষে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তবুও আপনার বসের নিকট থেকে কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন পেলেন না। আপনার শত চেষ্টার পরও সে আপনার কাজে সন্তুষ্ট নয়। এ অবস্থায় শুধু আপনি কেন, আমাদের সকলের মন খারাপ হয়ে যায়। এ কারণে আমরা অনেকেই কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে ফেলি। অনেকে বসের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে ফেলি। কিন্তু এটি কি আসলেই ঠিক?

Source: smilesavvy.com
এ অবস্থায় আপনি কী করবেন? বলতে পারছেন না? সমস্যা নেই, আজকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আর আমার ব্যক্তিগত মতামতের সমন্বয়ে আপনাকে জানাবো আপনার কী করা উচিৎ।
মেজাজ ঠিক রেখে রিভিউটি পর্যবেক্ষণ করুন
আমাদের জীবনের একটা লক্ষ্য রয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। এগিয়ে যাওয়ার পথে শত্রুকে উপড়ে ফেলে নয়, শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করতে হবে।

Source: cnbc.com
এ বিষয়ে লেখক ও ক্যারিয়ার কোচ মারিয়ে ম্যাকলিন্টায়ার বলেন। ‘যখন বস আপনাকে নেগেটিভ রিভিউ দেয়। তখন আপনার মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু রেগে যাওয়া উচিৎ নয়’।
‘আপনি যদি নেগেটিভ রিভিউ পেয়ে নিজেও নেগেটিভ হয়ে পড়েন। আবেগের বশবর্তী হয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে পড়েন। তাহলে এটি থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়বে’।
সময় নিন, ভাবুন
এরপর সিদ্ধান্ত নিন
যখন আমরা ভালো কাজ করেও নেগেটিভ রিভিউ পাই, তখন এটি হজম করা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পরে। তখন মেজাজ খুব খারাপ হয়। মনে হয় বসের মাথা ছিঁড়ে ফেলি! কিন্তু মেজাজ খারাপ করে লাভ নেই, বরং ক্ষতিই হবে। এ বিষয়ে ক্যারিয়ার পরামর্শক কেট ও’সুলিভান বলেন,

Source: Youtube.Com
এবার একটু ভেবে দেখুন, আপনি কী করবেন। আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে ফেলবেন? অথবা আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করবেন?
এক বিশেষজ্ঞ বলেন “এ অবস্থায় শান্ত থাকুন। শান্ত থেকে বসের নিকট সরি বলুন। একটু পর্যবেক্ষণ করে দেখুন। কিছু ভুল অবশ্যই ছিল। তাই বসকে বলুন, এই ভুলগুলো আর হবে না। আশেপাশের কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। নীরব থেকে নিজেকে প্রস্তুত করুন আগামীর জন্য”।
ভুল অনুধাবন করুন
আপনি একটি নেগেটিভ
রিভিউ পেলেন। আপনি শান্ত
থেকে বসকে
সরি বলে
ভবিষ্যতে না
হওয়ার নিশ্চয়তা দিলেন। আবারও
গতানুগতিক কাজ
করে চললেন। তাহলে কি
নিজের উন্নতি
সম্ভব?

Source: boldnewmom.com
এক্ষেত্রে আপনার উচিৎ
হবে, ঐ রিভিউটি ভালো
করে পর্যবেক্ষণ করা। ভুলগুলো
চিহ্নিত করা। ভুলগুলো শোধরানোর রাস্তা খুঁজে বের
করা। এরপর ভুলগুলো
শুধরে নিজের
দুর্বলতাকে বাই
বাই বলে
দক্ষতার পাল্লা
ভারী করা। তাহলেই কেবল
নিজের উন্নয়ন
সম্ভব হবে। এগিয়ে যেতে
পারবেন আপনার
লক্ষ্য পূরণের
কাঙ্ক্ষিত রাস্তায়।
পরিকল্পনা তৈরি করুন
নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। নিজেকে শান্ত রেখেছেন। বসকে ভুল না হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। ভুল বুঝতেও পেরেছেন। এবার একটি পরিকল্পনা করুন। এ বিষয়ে চ্যামেলিওন রিজুমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর লিজা র্যাঞ্জেল বলেন,
‘আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। পরিকল্পনা করে বসে থাকবেন না। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করুন।’

Source: wikihow.com
আপনার পরিকল্পনাটি একটি খাতায় লিখে রাখুন। অনেকেই পরিকল্পনাটি লিখে রাখেন না। এটা গুরুত্বহীনতার পরিচয়। তাই এটা লিখে রাখুন। আর পরিকল্পনার প্রতিটি অংশ ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করুন। বাস্তবায়ন হয়ে গেলে টিক চিহ্ন দিন প্রতিটি লাইন।
এ প্রসঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন ‘আমাদের প্রতিটি পরিকল্পনা লিখে রাখা উচিৎ। কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক দীর্ঘ সময় সম্পূর্ণ অংশ ধরে রাখতে পারে না। তাই ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়’।

Source: iqoffice.ca
পরিকল্পনাকে হারিয়ে যেতে দেবেন না, লিখে রাখুন। বাস্তবায়ন করুন প্রতিটি অংশ। বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলুন। নির্ভুল করে তুলুন নিজের প্রতিটি কাজ। এগিয়ে চলুন সকল বাঁধা অতিক্রম করে। সফলতা ধরা দেবেই।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কাজ
সম্পন্ন করুন
আপনার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করুন। আমাদের জীবনের যেমন একটা সীমারেখা রয়েছে, তেমনি আমাদের প্রতিটি কাজের সময়সীমা থাকা উচিৎ। নইলে পরিকল্পনার জায়গায় পরিকল্পনা থেকে যাবে কখনই পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

Source: 123rf.com
এজন্য পরিকল্পনার প্রতিটি অংশকে দিনে, সপ্তাহে, মাসে এমনকি বছরে ভাগ করুন। এরপর প্রতিটি অংশ সময় মতো সম্পন্ন করুন। সেই সঙ্গে প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করুন কতটা সম্পন্ন হলো।
অভিজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা
করুন
আপনি আপনার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে চলেছেন। এ অবস্থায় আপনার বিশ্বস্ত সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এতে করে, তারা হয়ত কিছু নির্দেশনা দিতে পারেন। সেই সঙ্গে আপনার পরিকল্পনায় কিছু ভুল থাকতে পারে। হয়ত এই ভুলগুলো আপনার নজরে পড়েনি। তারা ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারেন।

Source: guideposts.org
এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার বসের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। তার কাছে দিকনির্দেশনা চাইতে পারেন। বসের সঙ্গে আপনার প্রতিদিনের প্রোগ্রেস সম্পর্কে আলোচনা করতে পারেন। এতে করে উন্নতির এই রাস্তায় টিকে থাকতে আগ্রহ পাবেন।
মনোবল ধরে রাখুন
আপনি ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তবুও নেগেটিভ রিভিউ পেয়েছেন। স্বভাবতই মন খারাপ হয়েছে। ভাবছেন হয়ত আপনি আর পারবেন না। আপনাকে দিয়ে আর হবে না।

Source: iungo.com
একবার ভাবুন, এর আগেও এর চেয়েও অধিক সমস্যায় আপনি পড়েছিলেন কি না? যদি পড়ে থাকেন। তাহলে এবার চিন্তা করুন, সেই সমস্যাগুলোও মোকাবিলা করেই বর্তমানে এসেছেন। তখন পারলে এখন পারবেন না কেন? নিজেকে বোঝান, আপনি অবশ্যই পারবেন। মনে রাখবেন, সেলফ মোটিভেশনের চেয়ে বড় মোটিভেশন আর কোথাও নেই। মনোবল ঠিক রাখুন। এগিয়ে চলুন। নিশ্চয় সফল হবেন।
Feature Image Source: rd.com
The post কর্মক্ষেত্রে নেগেটিভ রিভিউ পেলে করণীয় কিছু পরামর্শ appeared first on Youth Carnival.
The post কর্মক্ষেত্রে নেগেটিভ রিভিউ পেলে করণীয় কিছু পরামর্শ appeared first on Youth Carnival.