জার্নালিংয়ের মাধ্যমে মস্তিষ্ক শাণিত করবেন যেভাবে

মস্তিষ্ককে প্রখর এবং মনকে শান্ত করতে জার্নালিং খুবই শক্তিশালী একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার মস্তিষ্ক আরো শাণিত করার সাথে সাথে সার্বিকভাবে নিজেকে আরো সফল করে তুলতে পারবেন। আরো স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে শিখবেন। যথাযথ এবং স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে শিখবেন। এমনকি অর্জন করতে পারবেন নিজের অভীষ্ট লক্ষ্য।

পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এবং সফল উদ্যোক্তারা জার্নালিং কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে থাকেন, এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সবসময় উদ্দীপ্ত থাকেন।
আপনি হয়তো ভাবছেন, জার্নালিং আপনার জীবনে কীভাবে কাজে আসবে? কীভাবে আপনি এই পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন? অথবা কখন এবং কীভাবে জার্নালিং কৌশল কাজে লাগালে আপনার কর্মস্পৃহা, আত্মবিশ্বাস, এবং প্রশান্তি বৃদ্ধি পাবে?
আজকের নিবন্ধে তাই জার্নালিংয়ের কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করব। এই কৌশলগুলো আপনাদের মানসিক স্থিতিশীলতা, এবং মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
১. জার্নাল স্ট্রাকচার তৈরি করুন
জার্নালিং শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হলো, একটি জার্নাল স্ট্রাকচার তৈরি করা। প্রথমবার জার্নাল স্ট্রাকচার তৈরি করতে গিয়ে অনেকেই বুঝতে পারেন না ঠিক কী করতে হবে! এ ব্যাপারে ভীত হওয়ার কিছু নেই। সহজ কথায় জার্নাল স্ট্রাকচার আসলে আপনার উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে লিখিত কিছু কর্মতালিকা। অর্থাৎ আপনি যে উদ্দেশ্যে জার্নালিং করবেন, সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নির্ধারণ করা কিছু কাজের তালিকা তৈরি করাই হল জার্নাল স্ট্রাকচার।

সুতরাং জার্নাল স্ট্রাকচার তৈরি করার জন্য প্রথমেই আপনার জার্নালিংয়ের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে নিন। কেন আপনি জার্নালিং করবেন? আপনার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য? আরো বেশি সৃজনশীল হওয়ার জন্য? নাকি আরো বেশি পিড়ন সহ্য করার উপযুক্ত হওয়ার জন্য?
জার্নালিংয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে জার্নাল স্ট্রাকচার তৈরি করা সহজ হয়। আপনি চাইলে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন নির্ধারণ করতে পারেন। প্রতিদিন যে প্রশ্নগুলোর সম্ভাব্য উত্তর আপনি ঠিক করবেন , অথবা কাজের মধ্য দিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো জার্নালিংয়ের জন্য নির্ধারণ করতে পারেন।
- আমি কেন আজ গর্বিত বা কৃতজ্ঞ?
আপনি প্রতিদিন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য পাঁচটি অর্থপূর্ণ উদাহরণ উল্লেখ করবেন।
- আজ কোন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করব?
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিদিনকার কর্মতালিকা থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কাজ নির্ধারণ করবেন, এবং তা লিখবেন।
- বর্তমানে আমি কোন লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করছি?
এই প্রশ্নের উত্তরে সাম্প্রতিক সময়ে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
- আজ কীভাবে আমি নিজেকে আরো ভালো রাখতে পারি?
এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু ভালো কাজ নির্ধারণ করুন, যা আপনাকে আরো বেশি সুখী করে।
আপনি চাইলে কাজগুলো আরো সহজ করার জন্য জার্নালিং করা অন্যান্য সমমনা মানুষদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। তাদের স্ট্রাকচারের সাথে নিজের স্ট্রাকচার মিলিয়ে দেখতে পারেন। অন্যদের থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজের জার্নাল স্ট্রাকচার আরো উন্নত করে তুলতে পারেন। মনে রাখবেন, একটি যথাযথ এবং সময় উপযোগী জার্নাল স্ট্রাকচার ফলপ্রসূ জার্নালিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ!
২. মস্তিষ্কের ডোপামিন নিঃসরণের জন্য কর্মতালিকা তৈরি করুন
অসংখ্য মানুষ দৈনন্দিন কর্মতালিকা নির্ধারণ এবং যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য জার্নালিং পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। জার্নালিং করলে মস্তিষ্ক আপনা থেকেই সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো লাল কালি দিয়ে কেটে দেয়, যা আপনাকে চাপমুক্ত হতে সাহায্য করে।

এটা খুব গভীর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার! সাধারণভাবে জার্নালিং না করা মানুষের কাছে এই বোধের বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকে না। তাই তারা এটাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখে না। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, যখন আপনার মস্তিষ্কে সজ্জিত দৈনন্দিন কাজগুলো থেকে সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো মস্তিষ্ক আপনা আপনি লাল কালি দিয়ে কেটে দেয়, তখন এই বোধ মস্তিষ্কে ডোপামিন নামের হরমোন নিঃসরণে উদ্বুদ্ধ করে। যার ফলে আপনি চাপ মুক্ত হন। নিজের মধ্যে কর্ম সম্পন্ন করার উদ্দীপনা কাজ করে। এমনকি আপনার মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারকে অনুপ্রাণিত করে!
যারা ডোপামিন কি তা জানেন না, তাদের কাছে নিশ্চয় উপরিউক্ত আলোচনা বিরক্তিকর মনে হয়েছে? এবার জেনে নিন, ডোপামিন কী। ডোপামিন হলো এক ধরনের হরমোন, যা কর্ম সম্পাদনের পর আপনার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ সৃষ্টি করে। একই সাথে খুব গভীরভাবে আপনাকে নতুন কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করে। সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের এই ক্রিয়াকলাপ আপনাকে আরও উৎপাদনমুখী, মনোযোগী ও অনুপ্রাণিত করে।
৩. জার্নালিংয়ের মাধ্যমে দিন শেষ করুন
প্রথমবার জার্নালিং করা অনেকে দিনের শুরুতে জার্নালিং করার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটা দোষের নয়। সকালে জার্নালিং করা খুবই ভালো। কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় বা প্রয়োজনীয় নয়। এর বিপরীতে অনেক মানুষ সন্ধ্যায় জার্নালিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তারা সারাদিনের কৃতকর্মের হিসাব মেলানো ছাড়াও পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।

সন্ধ্যায় বা রাতে জার্নালিং করলে মানসিক অশান্তি দূর হয় এবং চাপমুক্ত থাকা যায়। কেননা পরবর্তী দিন সকালে জার্নালিং করতে গেলে তা আপনার জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। দিনের শুরুতেই সারা দিনের হিসাব করতে গেলে সব কিছু আপনার কাছে বিক্ষিপ্ত লাগতে পারে।
সুতরাং সন্ধ্যায় বা রাতে জার্নালিং করা উত্তম। এতে পরবর্তী দিনের যথাযথ প্রস্তুতি যেমন নেওয়া যায়, তেমনি দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে শান্তিতে ঘুমানো যায়। কাজেই রাতে পরবর্তী দিনের জার্নালিং করুন এবং সারাদিনের চিন্তামুক্ত হয়ে শান্তিতে ঘুমান।
ফিচারড ইমেজঃ kelly needham