যে কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য তাইওয়ান যেতে পারেন

তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ। তাইওয়ান ইউরোপ এশিয়া প্লেট ভূগঠন প্রণালী দ্বারা গঠিত এবং ফিলিপাইন এর দক্ষিণে অবস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে দ্বীপপুঞ্জসমূহ প্রজাতন্ত্রী চীনের অধীনে হয়। সাধারণত প্রজাতন্ত্রী চীন-শাসিত এলাকা বোঝাতেও “তাইওয়ান” ব্যবহৃত হয়। প্রজাতন্ত্রী চীন প্রশান্ত মহাসাগরের তাইওয়ান দ্বীপ, অর্কিড আইল্যান্ড, গ্রিন আইল্যান্ড শাসন করে থাকে। এছাড়া পিশকাদোরিশ, কিনমেন, ফুচিয়েন তীরবর্তী মাৎসু আইল্যান্ড প্রভৃতি দ্বীপও শাসন করে। তাইওয়ান ও ফেংহু দ্বীপপুঞ্জগুলো (তাইপে ও কাওসিউং পৌরসভা বাদে) প্রজাতন্ত্রী চীনের তাইওয়ান প্রদেশ হিসেবে প্রশাসিত হয়।

Image Source: nationalinterest.org
শিক্ষার দিক দিয়ে এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ান বেশ অগ্রসর। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য তাইওয়ান আসেন। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে দেশটির কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাইওয়ান সরকার তাদের বাজেটের একটি বিশাল অংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করে। শিক্ষার্থীবান্ধব শহরের মধ্যে শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে একটি তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে। এখানকার প্রত্যেকটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষা পদ্ধতিই গবেষণামূলক।
১. উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা
তাইওয়ানে ১০০টির বেশি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০১৮ অনুযায়ী, পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় তাইওয়ানের। এ তালিকায় ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি (National Taiwan University) অবস্থান হলো এশিয়ায় ২৫তম এবং বিশ্বে ৭৬তম।
এছাড়াও বিশ্বের ৩০০টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তাইওয়ানের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো,
- ন্যাশনাল টিসিং হুয়া ইউনিভার্সিটির (National Tsing Hua University) স্থান এশিয়ায় ৩২তম।
- ন্যাশনাল চেং কুং ইউনিভার্সিটির (National Cheng Kung University) স্থান এশিয়ায় ৩৫তম।
- ন্যাশনাল চিয়াও টাং ইউনিভার্সিটির (National Chiao Tung University) স্থান এশিয়ায় ৩৬তম।
- ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (National Taiwan University of Science and Technology) স্থান এশিয়ায় ৪৭ তম।
তাইওয়ানের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং মান কেমন তা এই পরিসংখ্যান দেখে সহজেই অনুমান করা যায়।
২. স্কলারশিপের সুযোগ
প্রতি বছর তাইওয়ান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিপুল পরিমাণ বৃত্তি দিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম স্কলারশিপ হলো , তাইওয়ান এডুকেশন অফ মিনিসট্রির ‘তাইওয়ান স্কলারশিপ”। ২০২০ সালের মধ্যে ১,৫০,০০০ বিদেশি শিক্ষার্থীকে তাইওয়ানে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তাইওয়ান সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইংরেজি কোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। সেইসাথে তাইওয়ান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব কিছু স্কলারশিপ রয়েছে, যা বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়।
৩. স্বল্প খরচে পড়াশোনার সুযোগ
তাইওয়ানে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডির পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যেও স্বল্প খরচে পড়াশুনার ব্যবস্থা আছে। বাৎসরিক মাত্র ৩৫০০ ডলারে যেকোনো বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সম্ভব। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র খরচে পড়ার সুযোগ ও বিভিন্ন বৃত্তিমূলক ব্যবস্থা তো আছেই। এছাড়াও এদেশে কেনাকাটা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া সব জিনিসের মূল্য খুব বেশি নয়।
৪. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে জানার সুযোগ
তাইওানিজরা অনেক বন্ধুসুলভ ও পরোপকারী। তাইওয়ানের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাইওয়ানের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত সব অনুষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য আলাদা সুযোগ করে দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যাতে করে তাইওয়ানের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা জানতে পারে। এছাড়াও প্রতি সেমিস্টারেই কোথাও না কোথাও পিকনিকের আয়োজন করা হয়।
৫. হোস্ট ফ্যামিলি
“তাইওয়ান হোষ্ট ফ্যামিলি” নামে একটি বিশেষ প্রোগ্রাম রয়েছে, যেটি তাইওয়ান মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে পরিচালিত হয়। তাইওয়ানে যারা নিজের দেশ ছেড়ে অনেক দিনের জন্য পড়াশুনা করতে আসে, তারা অবশ্যই তাদের পরিবারকে মিস করে। এসব শিক্ষার্থীদের কে সামান্য হলেও সমর্থন ও সহায়তা দেয়ার জন্য এই হোস্ট ফ্যামিলি প্রোগ্রামটি চালু করা হয়।

Image Source: youtube.com
এখানে অনেক তাইওানিজ পরিবার আছে, যারা ১ থেকে ৩ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে তাদের পরিবারের সদস্য করে নেয়, যতদিন তারা তাইওয়ানে আছে। বিভিন্ন উৎসব পার্বণ উপলক্ষে এসব পরিবার, শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ করে, যাতে তারা একাকীত্ববোধ না করে। সেইসাথে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এসব পরিবারের সাথে থেকে তাইওয়ানের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারগুলো আরো কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারে।
৬. নিরাপদ শহর
সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন ২০১৮ জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের নিরাপদ শহরের তালিকায় ১৬তম স্থানে রয়েছে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে। এ দেশের সরকার নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে বদ্ধপরিকর। এখানের আইন খুবই কঠোর, সে কারণে অপরাধের হারও সীমিত।
৭. কাজের সুযোগ
তাইওয়ানকে বলা হয় চার এশীয় বাঘের একটি। তাইওয়ানের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে বলা হয় তাইওয়ান মিরাকেল (Taiwan Miracle)। এশিয়ার বেশ কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান htc, Asus, Acer সহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে উঠেছে। শুধু ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিই না, সব ধরনের কোম্পানিই এখানে আছে বড় পরিসরে। যথাযথ যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে চাকরি করার জন্য অবশ্যই চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী হতে হবে।
৮. অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ
তাইওয়ানে রয়েছে দ্য ওয়ার্ল্ড টলেস্ট বিল্ডিং: তাইপে ১০১ (The world’s tallest building: Taipei 101), ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম ভবন ছিলো। বর্তমানে এ ভবনটি বিশ্বের উচ্চতম ভবনের তালিকায় দশম স্থানে অবস্থান করছে। এছাড়াও তাইওয়ানের রয়েছে তাইওয়ান হাই স্পিড রেল (Taiwan high speed rail) যার গতি ৩৫০ কিলোমিটার। এদেশের প্রায় সব বড় ট্রেন স্টেশন, বাস স্টেশন, পর্যটক এলাকা, পার্ক সহ প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি ওয়াই-ফাই হট স্পট আছে, যা iTaiwan ফ্রি ইন্টারনেট সার্ভিস নামে পরিচিত।

Image Source: tipssavvy.com
এবার তাইওয়ানের নাইট মার্কেটের (Night market) কথা না বললেই নয়। তাইওয়ানে এসে কেউ যদি নাইট মার্কেটে না যায় তবে সে যেন দেশটির হৃদয়ে প্রবেশ না করেই চলে গেল। নাইট মার্কেটকে এখন তাইওয়ানের হৃদয় হিসেবেই বিবেচনা করছে দেশটির নীতিনির্ধারকরা। দেশটির বিভিন্ন শহরে গড়ে ওঠা তিনশ’র বেশি নাইট মার্কেট এখন অভ্যন্তরীণ ক্রেতার চেয়ে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তাইওয়ানের বিখ্যাত এই নাইট মার্কেট হচ্ছে রাতে কেনাকাটার ছোট বাজার। সব পণ্যের দাম হাতের নাগালে বলে এসব দোকানে সন্ধ্যার পর প্রচুর ভিড় হয়। সেই সঙ্গে হয় প্রচুর খাওয়া দাওয়া।
পৃথিবীতে যে কত রকমের খাবার আছে তা তাইওয়ান না আসলে বুঝতেই পারবেন না। তাইওয়ানে বিশ্বের সকল ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তবে এদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ অসাধারণ। তাইওয়ানের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে গরুর মাংসের স্যুপ, নুডুলস স্যুপ, পেয়াজের প্যান কেক, বাবল চা সহ আরো নানা রকম মুখরোচক খাবার।
Featured Image: coe.uga.edu
The post যে কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য তাইওয়ান যেতে পারেন appeared first on Youth Carnival.
The post যে কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য তাইওয়ান যেতে পারেন appeared first on Youth Carnival.